
_______এই শোনো, সুজি আর সাবুও কিন্তু দিন কে তোমার মতোই আমিষখোর হয়ে যাচ্ছে। এতো মাছ মাংস ডিম খাওয়া কি ভালো বলো ?
হা হা করে দরাজ গলায় হেসে ওঠেন রীনার চেয়ে বছর পাঁচেকের বড় কিশোরবাবু। ওনাদের জুটিটার মধ্যে এই বয়েসের ফারাক টুকু আছে বটে, কিন্তু খুব সুন্দর বোঝাপড়া দুজনের মধ্যে।
আমিষ খেতে ওনারা দুজনেও যে একটু বেশিই ভালোবাসেন সেকথাটাও সত্যি। অন্যান্য বাড়ির মতো শনি, মঙ্গল বারে নিয়ম করে নিরামিষ রান্না হয়না এবাড়ির রান্নাঘরে। হয়তো সেই কারণেই এসব চিন্তা উঁকি দেয় রীনার মনে।
শহরের ওপরে বাড়ি হলেও বাড়ির পাশেই একটা নিজস্ব পুকুর আছে ওনাদের। যদিও তা এজমালি।
কিশোর বাবুর দাদা তরুণ ঘোষ আর ভাই নবীন ঘোষ এই পুকুরের অংশীদার। কাজে কাজেই লোক ডেকে জাল ফেলে মাছ ধরা হলে তখন সমান তিন ভাগের একভাগ পান কিশোর বাবু।
কিন্তু ছিপ দিয়ে মাছ ধরায় কারোর কোনো আপত্তি নেই। যার তখন সময় বা ইচ্ছে সেই ই ছিপ নিয়ে বসতে পারে নিজেদের বাঁধানো ঘাটে। কিছুক্ষণ বসতে পারলে খাওয়ার মতো মাছ আধঘন্টাতেই উঠে যায়। আর ইংলিশ , চিংড়ি , চিতল এসব যেকোনো পছন্দের মাছ খেতে হলে তো দু মিনিটের হাঁটা দুরত্বেই তো বাজার। সুতরাং রবিবারের মাংস বাদ দিলে সপ্তাহের বেশীরভাগ দিন তো রান্না ঘর থেকে মাছ ভাজার গন্ধ বের হয় ই।
আসলে আজ দুপুরের মুড়িঘন্ট রান্নাটা এতো সুস্বাদু হয়েছে যে সুজি আর সাবু ভাত ছেড়ে পারলে শুধু ওটাই খায়। আর ঘেমে নেয়ে যে রীনা মাছের ঝোল রাঁধলো সেটা কি দিয়ে খায় ! মাছ ভাজা তো রান্না করতে করতেই ওদের প্লেটে করে দিয়েছিলো। ওরা শুধুমুখেও মাছভাজা খেতে ভালোই বাসে। ভাতের পাতে তো ভালোবাসে সকলেই, তবে সব মাছ নয়, কাটা-পোনা , বাটা-রাইখোর, ইলিশ এসব।
এই মাছ ভাজার গন্ধ যদি শনিবারে বের হয় , তখনই
প্রতীবেশীরা নাক সিঁটকোয়। না সোজাসুজি ওরা কিছু বলেনা, তবে পরস্পরের জোড়ালো কথাবার্তার কিছু তো কানে আসে!
_______কি গো, কাল রে এঁচোড়টা আনলে, ভালো ছিলো ?
অথবা
______আজকে জানো তো সুশীলের দোকানে পনীর ছিলো না, হেঁটে জামতলায় গিয়ে তবে পেলাম একটা দোকানে।
এসব কথা থেকেই বোঝা যায় যে ওনাদের সবার বাড়িতেই আজ নিরামিষ।
অর্থাৎ
মাছ ভাজার গন্ধটা বেরোচ্ছে সুজি-সাবুদের রন্ধনশালা থেকে।
এপাড়ার ঘোষ মাসিমা একাদশী করতেন। পূর্ণিমা অমাবস্যা মানতেন। আদর করে নাতি-নাতনির নাম সাবু-সুজি রেখেছিলেন আর সেই বাড়িতে আমিষের ধুম !
কি করবে রীনা ! কিশোর বাবুকে বলেও কোনো লাভ নেই। উনি তো নিরামিষ দিন কাটানোর ভয়ে, আর হয়তো পুকুর আছে বলেই বাড়িতে হাঁসও রেখেছেন। আর বলেন, হাঁসের ডিম নাকি নিরামিষ, হংসফল ।
পড়শিদের চোখ টাটালেও কিছুই করার নেই। রন্ধনশালা থেকে আমিষ গন্ধ বের হবেই। মনে মনে এসব কথা ভেবে মাঝে মাঝে হাসিও পায় রীনার।
No posts
No posts
No posts
No posts
Comments