
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মতে,"বাঙ্গালা দেশের সমাজকে সজীব রাখিবার জন্য মধ্যে মধ্যে রামগোপাল ঘোষের ন্যায় বক্তার, হুতোম প্যাঁচার ন্যায় রসিক লোকের এবং ভোলা ময়রার ন্যায় কবিওয়ালার প্রাদুর্ভাব হওয়া নিতান্ত আবশ্যক।"
কথাটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আর কোন মানুষের মধ্যে যে কি গুণ লুকিয়ে থাকে কিছুই বলা যায় না।
তাই অন্তত কোনো কাজকেই ছোটো বলে ভাবতে পারিনা। মনে হয় একটা পিঁপড়ে বা মশাও কোনো না কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে বেশি কিছু জানে বা বোঝে।
যতই দেখিনা কেন যে আম গাছের বীজ থেকে শুধুমাত্র আমগাছই হয় বা নিম গাছের বীজ থেকে শুধুই নিম গাছ তবু তখন চুরাশী লক্ষ জন্মের কথা আমাদের পূর্বসূরীদের মুখে শুনে, হেসে উড়িয়ে দিতে পারিনা কিছুতেই ।
সমস্ত পৃথিবীর জীবজগৎ সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি! আর জানিনা বলেই কোথাও কোনো প্রতিভার বিকাশ হতে দেখলে মনে মনে পুনর্জন্মের কথা ভাবি। ইচ্ছে ক'রে না ভাবলেও ভাবনাটা এসেই যায়। আসলে প্রতিভার স্ফুরন এমন এক আশ্চর্য ব্যাপার যে আমরা সকলেই অবাক হতে বাধ্য হই।
আর মানুষ যখন এরকম অবাক হয় তখন সেই ঘটনাটিকে অস্বাভাবিক বলেই ভাবে । আর কোনোরকম ব্যাখ্যা খুঁজে না পেলে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কাজে কাজেই পূনর্জন্মের ধারণাটিকেই আঁকড়ে ধরতে চায়।
কারো ভালো লেখা পড়তে গিয়ে হঠাৎ করেই বিনা কারণে ভিভুতিভূষণ, তারাশঙ্কর, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, মাইকেল রা মনের মাঝে উঁকি দিয়ে যান।
সবকিছুর মূলেই তো সৃষ্টি, স্থিতি আর প্রলয়। একই পরিমান শক্তি ও পদার্থ ঘুরে ফিরে নানা রূপে দেখা দেয় এই জগতে। এ তো পূনর্জন্ম ই।
মহাকাল ই সব । ভোলা মহেশ্বর তো ভোলাতেই চান
জন্ম জন্মান্তরের সব কথা। নটরাজের নৃত্য ভঙ্গিমা এই শিক্ষাই দেয় যে বর্তমানে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমাদের। কারণ আসলে বর্তমান বলেও কিছুই নেই। শুধু আনন্দে জীবনের মুহুর্ত গুলো কাটিয়ে যেতে পারাটাই মূল লক্ষ্য। নিজে ভা থেকে অন্যকে আনন্দদিতে পারাটাই আসল কথা। কারণ আনন্দ এমন এক অনুভূতি মা দিতে পারলে তার নিজের কাছে ফিরে আসবেই। তাই সদাই আনন্দের পূনর্জন্ম চাই।
নিজের পরিচয় দিতে গিয়েও ভোলা ময়রা বলতেন,
"আমি সে ভোলানাথ নই রে, আমি সে
ভোলানাথ নই।
আমি ময়রা ভোলা, হারুর চ্যালা
শ্যামবাজারে রই।"
No posts
No posts
No posts
No posts
Comments