
Share0 Bookmarks 39 Reads0 Likes
কলকাতার পূজোর আড্ডা মানেই নাকি ম্যাডক্স স্কোয়ার।
আমি নই, কথাটা বলেন আমার মেজো মামাশ্বশুর।
সেজেগুজে নতুন পোষাক পড়ে ওনারা নাকি পূজোর সময় ওখানেই যেতেন আড্ডা দিতে।
এসব সত্তর, আশি, নব্বুই এর দশকের খবর।
তাঁর সাথে আমার যখন দেখা হলো হালতুর বাড়িতে,
তখন এসব কথাই গল্প করছিলেন কফি খেতে খেতে।
অনেক পরে জেনেছি ওখানকার এক রাস্তার কথা।
শরৎ বসু রোড ও হাজরা রোডের কাছেই অবস্থিত,
এক উপন্যাসের নামে রাস্তাটির নাম "স্বর্ণলতা"।
আসলে নামটা অবশ্য "স্বর্ণলতা স্ট্রিট" ।
ম্যাডক্স স্কোয়ারের আড্ডা এখন হয় কি না জানিনা,
আজকালকার আড্ডা মানেই হয়তো গুগল মিট !
বাঙালীর সাহিত্য প্রীতির এ এক অসামান্য নিদর্শন !
এবার জানার পালা কে এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন।
লেখকের নাম তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
না, না, স্বনামধন্য নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় নন।
পিতা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এই নাম দিয়েছিলেন।
কি জানি কেন যে নামটি উনি পাল্টে ফেলেন !
হয়তো তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় কেই সম্মান জানান !
তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় অনেক পুরোনো দিনের লেখক ছিলেন। প্রায় বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সমসাময়িক। তখনকার দিনে সাহিত্যের ভাষা সাধু ভাষা হলেও কথ্য ভাষা কিন্তু চলিত ছিলো।
ঠিক যেমন এখনকার দিনে বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডার সময় সামান্য গালাগালি ব্যবহৃত হলেও তা লেখা সমীচীন নয়, তেমনই চিঠি লিখতে হলেও লোকে সাধু ভাষারই শরণাপন্ন হতেন।
১৮৪৩ সালের ৩১শে অক্টোবর নদীয়া জেলার বাঘআঁচড়া গ্ৰামে এই প্রতিভাবান শিশুর জন্ম হয়। পিতা মহানন্দ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ধার্মিক ও উদারচেতা। ইংরেজী শিক্ষার উদ্দেশ্যে মাত্র দশ বছর বয়েসেই তারকনাথকে তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র অম্বিকাচরণের বাড়ি কলকাতার ভবানীপুরে পাঠিয়ে দেন।
সেখানে থেকে পড়াশোনা করে ক্রমে, মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করে কৃতবিদ্য চিকিৎসক রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কর্ম জীবনে তিনি সত্যিই সব্যসাচী রূপে প্রতিভাত হয়েছিলেন। একদিকে এ্যাসিসট্যন্ট সার্জেন ও অপরদিকে সাহিত্যিক।
কর্ম জীবনে ভ্যাকসিন সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে গ্রাম বাংলার নানা স্থানে অবস্থান করার সূত্রে দেখেছেন অসংখ্য মানুষের জীবন প্রনালী। মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন সংগ্রাম খুব কাছ থেকে অনুভব করেছেন।
কাঁচা মাটির মেঠো সুরের রেশ ধরা পড়েছে তাঁর এই স্বর্ণলতা উপন্যাসটিতে। রাজশাহী থেকে প্রকাশিত এই উপন্যাসটিতে লেখকের নাম প্রকাশ করা হয়নি প্রথমে। কারণ স্বল্পভাষী তারকনাথ ছিলেন প্রচারবিমুখ। সাহিত্যের গুণমান বিচার করে না হলেও বাংলার জনগনের প্রাণে সাড়া জাগাতে পেরেছিলো স্বর্ণলতা। চতুর্থ সংস্করণে সাহিত্যিক বন্ধু ঈন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের অনুরোধে তিনি লেখক হিসেবে নাম প্রকাশ করেন।
No posts
No posts
No posts
No posts
Comments